মাছ চাষে স্বাবলম্বী শাওন, বছরে আয় ১৬ লাখ টাকা
মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে। তবে কুষ্টিয়ার শাওন খানের গল্পটা অনেকের কাছেই রোল মডেল। একজন সফল মাছ চাষি শাওন খানের এখন বছরে আয় ১৬ লাখ টাকা। মাছ চাষ করে তিনি ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কিনেছেন, নিজের জন্য বাড়ি বানিয়েছেন আর মোটরসাইকেল কিনেছেন। অন্যদিকে আরও ৮ জনের কর্মস্থান সৃষ্টি করেছেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অজ পাড়া গাঁয়ে তার বাড়ি। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়ীয়া-চরপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। শাওন গ্রামের স্কুল খেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হয় আমলা সদরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সপ্তম শ্রেণিতে উঠার পর শাওন পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। পরে আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ২০১৫ সালে আমলা সরকারী কলেজ থেকে বিএ পাশ করার পর শুরু হয় বেকার জীবন।
কিন্তু নিজের বুদ্ধি আর মেধা ও সততাকে কাজে লাগিয়ে বেশি দিন তাকে বেকার হয়ে থাকতে হয়নি। বর্তমানে শাওন খান মিরপুর উপজেলার সবচেয়ে সফল মাছ চাষি।
শাওন খান এখন ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের এক বিঘা পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। বছর শেষে ভালো লাভ হয়। ২০১৬ সালে মৎস্য অফিস থেকে লোন নিয়ে ৩টি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ বাড়ান। ২০১৭ সালে আরও ৫টি পুকুর লিজ নেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি তাকে। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করছেন শাওন।
মাছ বিক্রির টাকায় ইতোমধ্যে ১০ বিঘা জমি কিনেছেন, বাড়ি বানিয়েছেন এবং কিনেছেন একটি মোটর সাইকেল। মাছচাষ করে শাওন এখন লাখপতি হয়েছেন। বর্তমানে তার মাসে আয় দেড় লাখ টাকা। বছরে আয় ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা খরচ হয়। খরচ বাদ দিয়ে বছরে তার লাভ থাকে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা।
সফল মাছ চাষি শাওন খান আরটিভি নিউজ বলেন, যখন বেকার জীবন ছিল। ঠিক তখনই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারি মিরপুর উপজেলায় মাছ চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেই মোতাবেক উপজেলা মৎস্য অফিসে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
শাওন খান আরও বলেন, বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ৬০ বিঘা পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করছি।
তার মধ্যে নিজের ২০ বিঘা পুকুর। আর গ্রামের বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে ৪০ বিঘা পুকুর ইজারা নেয়া হয়েছে। প্রতি বিঘায় বছরে ২০ হাজার টাকা ইজারা দিতে হয়। শাওনের পুকুরে রুই-কাতলা, পাবদা, শিং, মৃগেল, সরপুঁটি, লাইলোটিকা ও সিলভার কার্প রয়েছে।
শাওন খানের বাবা গিয়াস উদ্দিন আরটিভি নিউজকে বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরই মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয় আমার ছেলে। শাওন এখন আর চাকরি করতে চায় না। বর্তমানে তার মাছের খামারে অনেকেরই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শাওনকে দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ শুরু করেছে। অনেকেই শাওনের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে নিয়মিত ভাবে।
শাওনের সফলতার বিষয়ে মিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিউল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, শাওন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমাদের অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। ৬ বছরে লাখপতি হয়েছেন। বর্তমানে ৬০ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেন। মৎস্য অফিস থেকে শাওনকে সকল প্রকার সাহায্যে সহযোগিতা করা হয়।
মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন বলেন, শাওন খান মাছ চাষে এ উপজেলার মডেল মাছ চাষি। সে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। শাওনের মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কেউ মাছ চাষ করতে চাই। তাদের উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সাহায্যে সহযোগিতা করা হবে।
এই বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাজদার রহমান বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়ার যুবকরা মাছ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। ইতোমধ্যে অনেক বেকার যুবক মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দিন দিন মাছ চাষে বেকার যুবকদের সংখ্যা বাড়ছে। যারা মাছ চাষ করছেন তাদের জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
জিএম
মন্তব্য করুন